মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
হাদিস বা নবীজির (সা.) কথামালা শুধু কথাই নয় বরং তা শরিয়তও। আমরা বিভিন্ন হাদিস থেকে জানতে পারি রসুল (সা.) বলেছেন, আমি নিয়মিত নামাজের আগে মিসওয়াক ছেড়ে দিয়েছি এই ভয়ে না জানি তা আল্লাহ উম্মতের ওপর ফরজ করে দেন আর আমার উম্মতের কষ্ট হয়ে যাবে। সালাতুত তারাবি সম্পর্কেও এরকম বর্ণনা আছে। হুজুর (সা.) বলেছেন, আমি নিয়মিত তারাবি পড়া ছেড়েছি এই ভয়ে যে, তা উম্মতের ওপর ফরজ করে দেওয়া হবে। হজ সম্পর্কেও এরকম একটি হাদিসের কথা মনে পড়ছে। একজন সাহাবি হজ নিয়ে খুঁটিনাটি প্রশ্ন করছিলেন। প্রশ্ন করতে করতে সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হজ কি প্রতি বছরই ফরজ? এ প্রশ্ন শুনে নবীজি (সা.) অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন। তিনি রাগ হয়ে বললেন, যদি আমি হ্যাঁ বলতাম তাহলে প্রতি বছরই হজ ফরজ হয়ে যেত। সুবহানাল্লাহ। এমন অসংখ্য হাদিস প্রমাণ করে কোরআনের আয়াতের বাইরেও রসুল (সা.)-এর কথা মুসলমানদের দলিলের উৎস। কিন্তু আজকাল একদল মানুষের আবির্ভাব হয়েছে যারা বলে, হাদিস মানা যাবে না। মানতে হবে কোরআন। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন কোরআনের আয়াত এবং হাদিস আউড়িয়ে এরা বলে কোরআনের বাইরে আর কারও কথা মানার সুযোগ নেই। উদাহরণস্বরূপ সুরা বাকারার ৭৯ নম্বর আয়াতটি দেখুন। আল্লাহ বলেছেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা নিজেরা কিছু রচনা করে এবং ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য বলে, ‘এই বিধিবিধান আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।’ তাদের হাত যা রচনা করেছে তা হবে তাদের সর্বনাশের কারণ, আর এর বিনিময়ে তারা যা অর্জন করেছে তা হবে তাদের ধ্বংসের উপকরণ।’ সুরা আলে ইমরানের ৭৮ নম্বর আয়াতেও প্রায় একই ধরনের কথা বলা হয়েছে- ‘ওদের মধ্যে কিছু লোক কিতাব পাঠের সময় জিহ্বাকে এমনভাবে ওলটপালট করে, যাতে তোমরা মনে কর তারা কিতাবের মূল অংশ পড়ছে, আসলে তা কিতাবের অংশ নয়। ওরা বলে, ‘এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত।’ কিন্তু আসলে তা আল্লাহর কথা নয়। ওরা জেনেশুনে আল্লাহর নামে মিথ্যা বলে।’ এসব আয়াত সামনে এনে হাদিস অস্বীকারকারীরা বলতে চায়, উলামায়ে কেরামগণ যে হাদিসকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত আয়াতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রচার করছে তা পুরোপুরি ভুল। সঠিক কথা হলো- হাদিস আল্লাহর কিতাব নয় বা কিতাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়। কথা তো সত্য। হাদিস আল্লাহর কিতাব নয়। যদি আল্লাহর কিতাব হতো তাহলে তো কোরআনেরই অংশ হয়ে যেত। তা আমরা নামাজে তেলাওয়াত করতাম। কোরআন ও হাদিস দুটোই ওহি। পার্থক্য হলো- কোরআন নামাজে তেলাওয়াত করা হয় আর হাদিস তেলাওয়াত করা হয় না। তবে বিধানের ক্ষেত্রে দুটোই সমান। কোরআনের আয়াত দিয়ে যেমন ফরজ সাব্যস্ত করা যায় তেমনি মুতাওয়াতির হাদিস দিয়েও ফরজ বা ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায়। হাদিস অস্বীকারকারীরা শেষের কথাটি মানতে চান না। তারা বলেন, হাদিস দিয়ে কোনো বিধান দেওয়ার সুযোগ নেই। বিধান দিতে হবে একমাত্র আল্লাহর কোরআন দিয়ে। আফসোস! হাদিস অস্বীকারকারী বন্ধুরা জানেন না, রসুলের সুন্নাহকে অস্বীকার করে তারা আসলে কোরআনকেই অস্বীকার করছেন। সুরা আলে ইমরানের ৩১ ও ৩২ নম্বর আয়াত দুটো দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করছি। যদিও এ প্রসঙ্গে শত শত আয়াত রয়েছে। স্থান স্বল্পতার জন্য এ দুটি আয়াত বাছাই করা হয়েছে। তাফসিরে মুনিরের তৃতীয় খণ্ডের ২০৬ পৃষ্ঠায় এসেছে- ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ইহুদিরা হুজুর (সা.)-এর কাছে এসে দাবি করে বসল আমরা আল্লাহর প্রিয়জন। আমরা আল্লাহকে ভালোবাসি।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীরসাহেব, আউলিয়ানগর।
লেখাটি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন…