হৃদয় কাঁদছে মুমিন বান্দার। আর হয়তো এক দিন পরই আমাদের থেকে বিদায় নেবে পবিত্র রমজান। নাজাতের এ শেষ সময়ে আমাদের উচিত আমলনামায় চোখ বুলিয়ে দেখা, কী করার ছিল আর কী করেছি? আমার মধ্যে কতটা পরিবর্তন এসেছে? আমি কতটা সংযমী হতে পেরেছি?
তাই ফিতরার জন্য বর্ণিত পাঁচ ধরনের খাদ্য খেজুর, পনির, যব, কিশমিশ ও গমের মধ্য থেকে যে কোনো একটির নির্দিষ্ট পরিমাণ উত্তম জিনিস অথবা তার মূল্য ফিতরা হিসাবে দান করা সচ্ছল মুসলমানদের কর্তব্য। যদিও আমাদের দেশে শুধু গম বা আটার মূল্য ধরেই ফিতরা দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে।
সাধারণত উল্লিখিত পাঁচ ধরনের খাদ্যের বাজারদর ধরে প্রতি বছর ফিতরার সর্বনিু হার প্রচারিত হয়। দেশের অভিজ্ঞ মুফতিরা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ হারটির ঘোষণা দেওয়া হলেও এটিকে ফিতরার একমাত্র হার মনে করা ঠিক নয়। এটি সর্বনিু হার। যাদের ওপর ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব, তারা কমপক্ষে এ হারে ফিতরা দেবেন। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ও বিত্তবানরা এর অধিক অঙ্কের হিসাবেও ফিতরা দিতে পারেন। তাদের জন্য সেটাই উত্তম। তবে ফিতরার জন্য হাদিসে বর্ণিত বস্তুগুলো কিংবা সেগুলোর মূল্য বিবেচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মনগড়া কিছু করার সুযোগ নেই।
সদকায়ে ফিতরের মাসআলাগুলো জেনে নেওয়া সবার জন্য আবশ্যক
১. যার ওপর জাকাত দান করা ওয়াজিব তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। তবে দুটির মধ্যে পার্থক্য এই যে, জাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ মালিকের কাছে পূর্ণ এক বছর থাকতে হবে। আর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য বছর অতিক্রান্ত হওয়া আবশ্যক নয়; বরং ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকলে তার ওপরও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
২. গম, গমের আটা, যব, যবের আটা, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। গম বা গমের আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম এবং যব বা যবের আটা, খেজুর, কিশমিশ কিংবা পনির দিয়ে আদায় করলে ওই পণ্য ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম কিংবা ওই পরিমাণের মূল্য দিতে হবে।
৩. ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে ও নিজের নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। সে হিসাবে ঈদের রাতে সুবহে সাদিকের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুরও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। আর সুবহে সাদিকের পর ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়। একইভাবে ঈদের রাতে সুবহে সাদিকের আগে কেউ মারা গেলে তার ওপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়। আর সুবহে সাদিকের পর মারা গেলে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
৪. ঈদের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা উত্তম। যদি তা না করে তবে ঈদের নামাজের পর তা আদায় করতে হবে।
৫. যার ওপর কুরবানি ও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়, এমন ব্যক্তিকে সদকায়ে ফিতর দেওয়া জায়েজ।
৬. গরিব মুসলমানকে সদকায়ে ফিতরের মালিক বানিয়ে দিতে হবে। সদকায়ে ফিতরের টাকা সরাসরি মসজিদ-মাদ্রাসা ইত্যাদির কাজে লাগানো যাবে না।
৭. এক ব্যক্তির সদকায়ে ফিতর একাধিক গরিবকে দেওয়া যায় এবং একাধিক ব্যক্তির সদকায়ে ফিতর একজন গরিবকে দেওয়া যায়।
প্রতি বছর সিয়াম এসে আমাদের স্মরণ করিয়ে যায় আমরা যেন সমাজের বঞ্চিতদের ভুলে না যাই।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি
www.selimayadi.com
লেখাটি যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন…