দেশকে সবুজ-শ্যামল করে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী | শনিবার, ২২ মে ২০২১ | পড়া হয়েছে 581 বার

বৃক্ষ-লতা-পাতা আর সবুজ-শ্যামল ভূমিময় হচ্ছে বেহেশত। গাছ প্রকৃতির অপূর্ব শোভা। গাছহীন পৃথিবী মলিন। গাছ মানুষসহ তাবৎ প্রাণিকুলের বন্ধু। গাছের অস্তিত্ব মানে প্রাণের অস্তিত্ব, প্রাণীর অস্তিত্ব। যে অঞ্চলে যত গাছপালা, সে অঞ্চল তত বেশি প্রাণবন্ত। অঙ্গার বাতাসে মিশে থাকে, গাছ তা নিগূঢ় শক্তিবলে শোষণ করে নিজের করে নেয়। গাছপালা মানবজীবন বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা লক্ষ্য করছি সমকালীন পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বরফ গলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। এমনকি পৃথিবীর কোনো কোনো এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশেরও সেই ঝুঁকি রয়েছে। গাছ অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি রোধ করে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কমায় এবং শীতকালে বাড়ায়। গাছ ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রতিরোধক হিসেবে মানুষের উপকার করে। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ গাছ। মানুষের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো তারা নিজেদের আবিষ্কারের ডানায় ভর করে উৎকর্ষতার চরম শিখরে আরোহণ করতে গিয়ে প্রকৃতিকে ভুলে গেছে পুরোপুরি। মানুষ যখন প্রকৃতিকে ভুলে যায়, প্রকৃতির বিরুদ্ধে চলে তখনই মানবগ্রহে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। অতীতেও এমনটাই ঘটেছে। দিন যতই গড়াচ্ছে করোনার আঘাত ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতম হচ্ছ। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সংবাদে দেখলাম, এক অ্যাম্বুলেন্সেই ২২ জন করোনায় মৃতকে দাহ করার জন্য চিতায় নেওয়া হচ্ছে। আরও দেখলাম, অক্সিজেনের অভাবের কারণে প্রিয়জনকে মুখ দিয়েই নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছেন এক নারী। আক্ষরিক অর্থেই আজ ‘মানবিক বিপর্যয়’ নেমে এসেছে ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। পাশের রাষ্ট্র হওয়ায় আমরা বাংলাদেশের নাগরিকরা বেশি ঝুঁকিতে আছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের বড় কোনো শক্তি নেই তাই তাঁর দুয়ারে ভিখারির মতো বারবার দাঁড়াতে হবে। হে দরদি পাঠক! আমরা লোভের বশে পাহাড় ধ্বংস করেছি, বন উজাড় করেছি, মানবতার শিক্ষা ভুলে গেছি। ফলে এখন আমাদের ওপর নেমে এসেছে করোনা। নেমে এসেছে অক্সিজেনের অভাব এবং তীব্র দাবদাহ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি দেশের মনোরম আবহাওয়ার জন্য ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের বনভূমি ১৫ শতাংশের কম। দিন দিন দেশের বনভূমি কমছেই। আমরাই গাছ কেটে বন উজাড় করে বনভূমি কমিয়ে ফেলছি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ ও অক্সিজেনের সংকট আমাদের চোখ রাঙাচ্ছে।আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি জমিনকে প্রশস্ত করেছি এবং এর ওপর পাহাড় স্থাপন করেছি। তোমাদের সুন্দর ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য জমিনে সব ধরনের নয়নাভিরাম বৃক্ষ ও উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। এসব বৃক্ষের মধ্যে অনুগত জ্ঞানী বান্দাদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ সুরা কাফ, আয়াত ৭-৮। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহই সুবাতাস প্রেরণ করেন, যা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। তারপর তিনি মেঘপুঞ্জকে আকাশে ছড়িয়ে দেন। পরে তাকে ঘনীভূত করে খ-বিখ- করেন। তখন তা বৃষ্টির আকারে পড়তে থাকে আর তাঁর ইচ্ছানুসারে বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেন। তখন তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। অথচ বৃষ্টি আসার আগে তারা নিরাশ ছিল।’ সুরা রুম, আয়াত ৪৮-৪৯।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

লেখাটি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন…

মন্তব্য...

comments

কে. আর প্লাজা (১২ তলা) ৩১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
ফোন: ০২-৯৫১৫৬৪৬, মোবাইল: ০১৭১৮৭৭৮২৩৮, ০১৯৬৫৬১৮৯৪৭
ইমেইল- mawlanaselimhossainazadi1985@gmail.com
ওয়ের সাইট: selimazadi.com