মহান আল্লাহর পবিত্র গুণবাচক নামগুলো আত্মস্থ করার বা ধারণ করার অর্থ হলো সেসব গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজে-কর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের আধার বা অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা। রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন যেহেতু রহমতের বা দয়ার, সুতরাং এই দিনগুলোতে আমাদের করণীয় হবে আল্লাহপাকের দয়ামায়া সংক্রান্ত নামসমূহের জ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করার চেষ্টা করা। আজীবন আল্লাহর রঙের ধারক-বাহক হয়ে তা অন্য মানুষের মাঝে বিতরণ করার দৃপ্ত শপথ নেওয়া। আল্লাহর গুণাবলি বা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়াই তো রমজানের আহ্বান। আল্লাহতায়ালার রহমতের নামগুলো হলো- আর রহমানু-অসীম দয়ালু, আর রহিমু-পরম করুণাময়, আল ওয়াদূদু-প্রেমময়, আর রঊফু-স্নেহশীল, আল আজিজু-মমতাময়, আল কারিমু-অনুগ্রহকারী, আস সালামু-শান্তিদাতা, আল মুমিনু-নিরাপত্তাদাতা, আল মুহাইমিনু-রক্ষাকর্তা, আল বাসিতু-করুণা বিস্তারকারী, আল মুইজজু-সম্মানদাতা, আল লাতিফু-করুণাকারী, আল মুজিবু-প্রার্থনা কবুলকারী, আর রাজ্জাকু-রিজিকদানকারী, আল ওয়াসিউ-দয়া প্রসারকারী, আল ওয়ালিয়্যু-পরম বন্ধু, আন নাফিউ-কল্যাণকারী, আল হাদিউ-পথের দিশারী, আন নাসিরু-সাহায্যকারী, আল হান্নানু-করুণাশীল, আল মান্নানু-দয়ার্দ্র ইত্যাদি। অতএব, আমাদের উচিত হবে রহমতের এই মাসে মাওলার এই বিশেষ গুণাবলি অর্জনে সচেষ্ট হওয়া এবং জীবন চলার প্রতিটি পদক্ষেপে তার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটানো। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তুমি জগদ্বাসীর প্রতি দয়া কর, তবে আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করবেন।’ বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি। আপনি দয়া বা রহমত লাভ করেছেন তা তখনই বুঝা যাবে যখন আপনার আচার-আচরণে দয়া ও করুণা প্রকাশ পাবে। সমস্যায় জর্জরিত আজকের পৃথিবীতে দয়া ও করুণার বড়ই অভাব। অশান্ত পৃথিবীর এই বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিকে শান্ত করতে পারে পারস্পরিক দয়া, অনুগ্রহ ও করুণা। রহমতের এই মোবারক দিনগুলোতে আমরা যদি দয়া ও অনুগ্রহের চর্চা করতে পারি, আমরা যদি রঙিন হতে পারি আল্লাহর রঙে তা হলে নিঃসন্দেহে সেই দিন খুব কাছেই যে দিন পৃথিবী পরিণত হবে সুখময় জান্নাতের টুকরায়। এবারের সিয়াম সাধনায় সূচনা হোক নতুন দিনের। পৃথিবী ভরে উঠুক আল্লাহর রঙের মানুষে।
সিয়াম ব্রতরাই রঙের মানুষ
সিয়ামের দিনগুলো ফুরায়
যে সায়েম হতে চায়
সে-ই তো খোদার রং কুড়ায়।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি, পীর সাহেব, উলিয়ানগর।
www.selimazadi.com