রমজানে ক্ষমাপ্রাপ্তদের তালিকায় যেন নাম লেখাতে পারি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী | শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ | পড়া হয়েছে 540 বার

রমজানে ক্ষমাপ্রাপ্তদের তালিকায় যেন নাম লেখাতে পারি

হজরত ওমর (রা.) প্রায়ই একটি কথা বলতেন আর কাঁদতেন। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ যদি আমাকে মানুষ না বানিয়ে ভেড়া-বকরি বানাতেন, তাহলে কতই না ভালো হতো। আল্লাহর বান্দারা আমার গোশত খেয়ে আল্লাহর ইবাদত করত। হায়! মানুষ হওয়ার কারণে কত দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে! সব দায়িত্ব তো ঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কিয়ামতের দিন কী জবাব দেব? আল্লাহ যদি আমাকে বলতেন, হে ওমর! তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি, দুনিয়ার মানুষ বিশ্বাস করো! এর চেয়ে বড় পাওয়া, এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কোনো কিছু আমার জন্য হতে পারে না।’

এক মস্ত বড় আল্লাহর অলি ভক্ত-মুরিদদের নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করল, হুজুর! আপনি তো কামেল মানুষ। আপনি অবশ্যই জান্নাতে যাবেন। ভক্তের এমন কথা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলেন আল্লাহর অলি। তিনি বলেন, জান্নাত তো দূরের কথা, আল্লাহ যদি দয়া করে রহম করে জান্নাতিদের পাপোশও আমাকে বানিয়ে দেন, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হবে? জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে তো বাঁচতে পারব।

ইমাম গাজালি (রহ.) লেখেন, ‘একদিন আল্লাহর নবী (সা.) জিবরাইল ফেরেশতাকে বলেন, হে জিবরাইল! তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে মিকাইল ফেরেশতাকেও দেখি। যতবার তাকে দেখেছি, ততবারই গম্ভীর মুখে ছিল সে। কখনো হাসতে দেখিনি তাকে। এর কারণ কী? জিবরাইল ফেরেশতা বলেন, আল্লাহর নবী! ফেরেশতাদের মধ্যে মিকাইল ছিল সবচেয়ে হাশিখুশি ফেরেশতা। মুখে হাসি লেগেই থাকত তার। কিন্তু যেদিন জাহান্নাম বানানো শেষ হলো, আর আমরা সবাই জাহান্নাম ঘুরে দেখলাম, সেদিন থেকে মিকাইলকে আর হাসতে দেখা যায়নি। সে বলে, না জানি এই জাহান্নামে আমাকেই ফেলা হয়। এত আজাব সহ্য করার ক্ষমতা মিকাইলের নেই। এ কথা বলেই জিবরাইল খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, শুধু মিকাইল কেন, ফেরেশতাদের সর্দার জিবরাইলেরও একমুহূর্ত জাহান্নামের আজাব সহ্য করার শক্তি নেই। আপনি অবশ্যই আপনার উম্মতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে কবরে যেতে বলবেন।’ (দাকায়েকুল আখবার)

আরেক দিনের ঘটনা। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকাকে নবীজি বলছেন, ‘হে আয়েশা! আল্লাহর দয়া না হলে কেউই জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচতে পারবে না। আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিও না? নবীজি বলেন, হ্যাঁ, আয়েশা! আল্লাহর দয়া না হলে আমিও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব না। তবে আমার প্রভু আমাকে ওয়াদা করেছেন, তিনি আমাকে দয়া করবেন।’

পাঠক! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় আপনি অনেক কিছু হয়েছেন। টাকা-পয়সা, ক্ষমতায় আপনার কোনো তুলনা নেই। কিন্তু মৃত্যুর পর আপনার টাকা-ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবে না। যদি নাজাত নামের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন, তাহলেই অনন্ত জীবনে অনাবিল সুখের ঠিকানা লাভ করতে পারবেন। হে আমার ভাই! দুনিয়ায় যেমন সার্টিফিকেট-অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে ভালো চাকরি পেতে হয়, তেমনি আখিরাতেও সুখের ঠিকানা জান্নাত পেতে হলে নাজাত নামের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এক জীবন কেঁদেকেটে খোদার প্রিয় হয়ে নাজাতের সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। একবার যদি নাজাতপ্রাপ্তদের তালিকায় আপনার নাম উঠে যায়, ব্যস! আপনি সফল। শুধু সফল নন, কোরআনের ভাষায়, ফাউজুন আজিম—মহাসাফল্য।

হে আমার প্রিয় পাঠক! আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ ১০ দিন হাত খুলে রাখবেন এবং যে চাইবে তাকেই নাজাত দেবেন। যে কাঁদবে তাকেই ক্ষমা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম টুকে নেবেন। তাই আসুন, জাহান্নাম থেকে মুক্তির এই দশকে আল্লাহর কাছে কেঁদেকেটে মুক্তি নিশ্চিত করি, করোনামুক্ত জীবন কামনা করি, বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যেক আরো সুন্দর কামনা করি। এপারের জীবন ও ওপারের জীবন যেন আল্লাহ আরামদায়ক করেন, সেই মিনতি করি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

মন্তব্য...

comments

কে. আর প্লাজা (১২ তলা) ৩১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
ফোন: ০২-৯৫১৫৬৪৬, মোবাইল: ০১৭১৮৭৭৮২৩৮, ০১৯৬৫৬১৮৯৪৭
ইমেইল- mawlanaselimhossainazadi1985@gmail.com
ওয়ের সাইট: selimazadi.com