রোজার শিক্ষা সজীব রাখুন বছরজুড়ে মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী | মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০১৭ | পড়া হয়েছে 538 বার

আর কদিন পর রহমতের মাস বিদায় নেবে। দীর্ঘদিনের সিয়াম সাধনায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে মুমিন বান্দারা যখন মহান প্রভুর কাছে আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করবেন, তখন তিনি তাদের প্রতি আনন্দের দৃষ্টিতে তাকাবেন।

আর তাদের জন্য বরাদ্দ করবেন জান্নাতের নেয়ামতরাজি। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন করতে গিয়ে মুমিনের যে দৈহিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, তা তাকে আখিরাতমুখী করে দেবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণের চেয়ে প্রিয়। তিনি আরও ইরশাদ করেন, শহীদের রক্ত থেকে কেয়ামতের ময়দানে ঘ্রাণ ছড়াবে এবং আরাফাতের ময়দানে হাজীদের ধূলিমলিন চেহারা ও এলোমেলো চুল দেখে আল্লাহতায়ালা তাদের নিয়ে গর্ব করবেন। বস্তুত দয়াময় প্রভুর হুকুম পালনের দৈহিক ছাপও আল্লাহর পছন্দ। তাই সারা দিন পানাহার বর্জনের ফলে শরীরে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা আল্লাহর দয়া উদ্রেক করে। রমজান মাস যখন শেষ হয়ে আসে, তখন দৈহিক দুর্বলতা বাড়তে থাকে। এভাবে ইন্দ্রিয়ের তাড়না ও প্রাবল্য নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে তার মধ্যে বিনয়, নম্রতা, শিষ্টাচার ও নিরহঙ্কারের মতো গুণাবলির সমাহার ঘটে। তার মধ্যে আখিরাতের চিন্তা জোরদার হয়। আম্বিয়ায়ে কেরাম মানুষকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য তাকে দুনিয়ার কাজে মশগুল রাখে। আধ্যাত্মিক সাধকরা তাদের শিষ্যদের দুনিয়া ত্যাগের অনুশীলন করান। তাদের ভাষায় এটাকে বলা হয় মুরাকাবা। এ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। একদিন হজরত হানজালা (রা.) চিন্তা করলেন, আমরা যখন আল্লাহর রসুলের দরবারে থাকি এবং তিনি আমাদের সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন, তখন আমরা যেন তা চাক্ষুষ দেখতে পাই। কিন্তু যখন তাঁর দরবার থেকে উঠে আসি এবং পরিবার ও সম্পদের কাছে আসি তখন অনেক কিছুই ভুলে যাই। নিশ্চয়ই এটা ইমানের আলামত নয়, বরং মুনাফেকির আলামত। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন এবং আল্লাহর রসুলের কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন। পথে দেখা হলো হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)-এর সঙ্গে। চোখে-মুখে অস্বাভাবিকতার ছাপ দেখে হজরত আবুবকর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। হজরত হানজালা বললেন, তিনি মুনাফেক হয়ে গেছেন। হজরত আবুবকর আশ্চর্য হলেন। হজরত হানজালা তখন নিজের মনোভাবটি বললেন। হজরত আবুবকর বললেন, একই অবস্থা তো আমারও। এই বলে তারা দুজনে আল্লাহর রসুলের দরবারে উপস্থিত হলেন এবং নিজেদের কথা খুলে বললেন। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, আমার কাছে থাকার সময়ে তোমাদের যে মনোভাব হয়, তা যদি সব সময় থাকত, তাহলে তোমাদের পথ চলার সময়ে এবং বিছানায় অবস্থানের সময়ে ফেরেশতারা তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করত। তবে তোমরা মাঝে মাঝে (আমার কাছে এলে যে মনোভাবা হয়) এই মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা করবে। (মুসলিম শরিফ) দীর্ঘ একটি মাস সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্ষুধা, পিপাসা ও প্রবৃত্তির চাহিদা দমনের যে সুফল অর্জিত হয়েছে এবং আল্লাহতায়ালার নির্দেশের সামনে আপন সত্তাকে বিলীন করে দেওয়ার যে শিক্ষা লালন করা হয়েছে, তা সজীব রাখতে হবে সারা বছর। মাহে রমজানে যেসব ভালো রেওয়াজ গড়ে উঠেছে, যেসব নেক কাজ পালন করা হয়েছে, বিশেষভাবে নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, রমজানের পরও সেগুলো অব্যাহত রাখতে পারা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। তাকওয়া, তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর প্রেমের দীক্ষা রমজানের বহুল আলোচিত বিষয় হলেও এগুলোর সম্পর্ক শুধু এ মাসের সঙ্গে নয়, সারা জীবন এসব মহৎ গুণ চর্চা করা জান্নাতি বান্দার লক্ষণ। সিয়াম সাধনার মাস চলে গেলেও সিয়ামের তাৎপর্য ও শিক্ষা বছরের সব মাসে অনুসরণ করা জরুরি। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, www.selimazadi.com

এই লেখাটি বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হয়েছে। দেখতে হলে ক্লিক করুন…

মন্তব্য...

comments

কে. আর প্লাজা (১২ তলা) ৩১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
ফোন: ০২-৯৫১৫৬৪৬, মোবাইল: ০১৭১৮৭৭৮২৩৮, ০১৯৬৫৬১৮৯৪৭
ইমেইল- mawlanaselimhossainazadi1985@gmail.com
ওয়ের সাইট: selimazadi.com